- TODAY's Newsletter
- Posts
- বেপরোয়া ইসকন – ISKCON
বেপরোয়া ইসকন – ISKCON
টিভি টুডে এক্সক্লোসিভ- ইসকন বর্তমানে বাংলাদেশে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি করেছে এবং এটি একটি আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের একটি সংবাদ পত্র, আনন্দবাজারে প্রকাশিত একটি গুজবের খবর পড়ার পর, এই বিষয়টি আরো বেশি আলোচিত হয়েছে। গুজব বলছি, কারণ এই খবরের উৎস বা সোর্সের কোন নির্ভরযোগ্যতা নেই। অর্থাৎ, এটি কোন মিডিয়ার পেজ বিক্রির অংশ, যেখানে আনন্দবাজার এই খবরটি ছড়িয়েছে, আর ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ এর ক্রেতা। কথিত বেনামী গোয়েন্দা সূত্রের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য না এমন গল্প প্রচার করা হয়েছে।
এবারের গল্পটি অনেকটা ২০১৪ সালের শেষভাগে ঘটে যাওয়া “বর্ধমান জেএমবি বোমা হামলা”র মতো মনে হতে পারে। তখন, মোদী প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছেন এবং প্রায় ছয় মাস পর এই ঘটনাটি ঘটেছিল। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, কথিত মমতা-সারদা-জামায়াত-জেএমবি চক্র। তখন কলকাতার মুসলমানদের ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠা এবং মমতা তাদের তোষামোদ করছেন এই অভিযোগ তুলে ভারতে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে একটি প্রপাগান্ডা শুরু হয়েছিল। একই অভিযোগ গুজবের আকারে বাংলাদেশে প্রচারিত হয়েছিল, যা ভারতের গোয়েন্দা সূত্র থেকে পাওয়া খবর বলে জানানো হয়েছিল। সেসময় কলকাতার মিডিয়া, যেমন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, চ্যানেল আই, প্রথম আলো ইত্যাদি এসব গুজব প্রচার করেছিল। তবে শেষমেশ, সব ফুসফুস হয়ে যায় এবং সেই অস্থিরতা থেমে যায়।
এখন আবার একই ধরনের গুজব ভারত এবং বাংলাদেশে ছড়ানো হচ্ছে, কিন্তু এবার বিষয়টি সম্পর্কিত ইসকন (ISKCON)-এর সাথে। ইসকন একটি বৈষ্ণব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যা মূলত কৃষ্ণপ্রেম প্রচার করে। বাংলাদেশে এটি একটি বিদেশী এনজিও হিসেবে নিবন্ধিত, তবে এর কার্যক্রম অনেকটাই সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করছে। বর্তমানে, ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে একটি বিতর্কিত ইমেজ তৈরি করেছে, যার ফলে এটি বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাদের এই ইমেজ কখনও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
এই পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করি, তাহলে ভারতের গুজব ছড়ানোর এই কৌশল খুবই অবিবেচক। ভারতের সরকারের যদি কোনও উদ্দেশ্য থেকে থাকে, তা আমরা জানি না। তবে যদি তারা একটি দাঙ্গা উসকে দিতে চায়, তবে তা বাংলাদেশে খুবই বিপজ্জনক হতে পারে।
ইসকন এবং কৃষ্ণপ্রেম
ইসকন নিজেদের “ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ISKCON)” বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘ হিসেবে পরিচিত। পশ্চিমা দেশে, বিশেষত আমেরিকায়, ব্যক্তিবাদী সমাজের মধ্যে, ইসকন এক ধরনের আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। মানুষ যখন একাকী এবং সম্পর্কহীন হয়ে পড়ে, তখন তারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা মেটাতে ইসকনকে বেছে নেয়। ইসকন তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং কৃষ্ণপ্রেম প্রচারের মাধ্যমে পশ্চিমা সমাজে জনপ্রিয়তা পায়।
তবে, ইসকনের এই ধর্মীয় কার্যক্রমের মাঝে এখন রাজনৈতিক কৌশলও জড়িয়ে গেছে। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর, ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক আরো গভীর হয়, এবং ভারতের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থের জন্য ইসকন এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনগুলি ব্যবহার হতে থাকে। ইসকন এখন শুধুমাত্র কৃষ্ণপ্রেম প্রচারের কাজ করছে না, বরং এটি ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে ভারতের হিন্দুত্ববাদী নীতির প্রচার করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন দেশে হিন্দু জনমতকে একত্রিত করার কাজ চলছে।
ইসকন এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় কৌশল
ইসকন, যা এক সময় শুধু আধ্যাত্মিকতার প্রচার করত, এখন ভারত রাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি বিশেষভাবে হিন্দুত্ববাদী নীতির প্রচার করে এবং ভারতের পক্ষে বিভিন্ন দেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে সংগঠিত করে। এর মাধ্যমে ভারতের হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। পশ্চিমে, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশে, ইসকন এই কাজটি করছে।
এটি বাংলাদেশে বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এ ধরনের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রচারণা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের সরকারের উচিত এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা এবং সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, বিশেষ করে “ফরেন ডোনেশন রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৭৮” অনুযায়ী।
উপসংহার
এখন সময় এসেছে, বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রমের উপর নজরদারি রাখা এবং যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে এটি দেশের সামাজিক শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর না হয়।
The post বেপরোয়া ইসকন – ISKCON appeared first on Tv Today.